শামচু - একটি রোমহর্ষক ভূতের গল্প

ইহা একটি সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রমী ভূতের গল্প যা আপনার রাতের ঘুম হরণ করতে পারে। দুর্বল চিত্তের মানুষেরা এই ভয়ংকর পোষ্ট পঠন থেকে বিরত থাকুন, হার্টের পালস বন্ধ নাও হইতে পারে। আশাকরি সকলে নিজ নিজ দায়িত্বে ভয় পাবেন, আর না পাইলে কোন ভাবেই এডমিনকে দায়ী করা চলবে না। তাহলে শুরু করা যাক এই শতাব্দির শ্রেষ্ঠ ভূতের গল্প, যে গল্পে আমার বাংলা একাডেমী পুরষ্কার কিংবা রাষ্ট্রপতি এ্যাওয়ার্ড পাওয়ার সম্ভাবনা খুবি ক্ষীণ।(সামান্য বাঙ্গ ভাব রয়েছে বাঙ্গ হজম না হইলে পড়ের দরকার নাই )

একদেশে ছিল বিশাল, ভয়ংকর এবং বদখৎ এক ভুত। তার নাম ছিল শামচু। শামচুের মনে সুখ ছিল না। জীবনের ৩৩ টি বসন্ত পেরিয়ে শামচু তার মনের মত পেত্নী খুঁজে পায়নি। আশেপাশে যেসব পেত্নী শামচুর পেছনে ঘুর ঘুর করত তাদেরকে শামচু মোটেই লাইক করত না। শামচুর একটাই কথা, তার জীবন সঙ্গী হতে হবে দুনিয়ার সবথেকে ডেঞ্জারাস, সবথেকে কুশ্রী আর সবথেকে বদরাগী। তার এই রেকোয়ারমেন্ট শামচুর দেশের কোন পেত্নীর মাঝে ছিল না। শামচু একবার নজর দিয়েছিল কোন এক দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দিকে ( মোটেও বাংলাদেশ না ) কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি চৌকস রাজনীতির চালে। বিরোধী দলের প্রধানের দিকেও ঝোঁক ছিল, কিন্তু একটাই প্রবলেম তার নাকি চোখের উপরে ব্রু নাই, খালি একটা পেন্সিলের দাগ, তাছারা একটু ফর্সা যা ভূত মহাশয় মোটেই পছন্দ করতেন না।

ভূত শামচুর মনে আরেকটা কষ্ট ছিল। সে এখনো পর্যন্ত কোন মানুষকে হত্যা করতে পারেনি যা হচ্ছে ভূতজগতের নেক্কারজনক ঘটনা। যতবারই সে মানব সম্প্রদায়ের কাউকে খুন করতে গেছে ততবারই কোন না কোন ঝামেলায় ফেঁসে গেছে। এই যেমন, যখন জেট লি কে খুন করতে গেছে তখন তাকে সারাদিন কুংফু প্রাক্টিজ করিয়ে ছেরেছে। যখন স্টিফেন হকিং কে খুন করতে গেছে তখন হকিং সাহেব তাকে কোড ওয়ার্ডে কিছু গালি দিয়েছে যার অনুবাদ করতে স্বয়ং শামচু লজ্জা পায়। যখন এঞ্জেলিনা জোলি কে হত্যা করতে যায়......, সেই কথা না বলাই ভালো, শুধু বলা যায় ১৮+ ।

যাইহোক, এতসব সঙ্কীর্ণতা পেরিয়ে আর কাউকে হত্যা করা হয়নি। তাকে ভূতমহলের সবাই কুফা শামচু নামে চিনতো। এই বদনাম ঘুচাতে শামচু ডিসিশন নিলো যে বাংলাদেশ নামের উন্নয়নশীল, হতদরিদ্র আর মনতান্ত্রিক দেশে যাবে। লোকমুখে শোনা যায়, সেখানেই বটতলা, হিজলতলা, গুলিস্তান কিংবা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের আশেপাশে তার স্বপ্নের সেই পেত্নীর দেখা মিলতে পারে। তাছারা বিশাল জনসংখ্যার সেই দেশে একজন মানুষ খুন করা কোন ব্যাপার না, সেখানে নাকি যাদের জনগনের রক্ষক বলে তারাই নাকি ঘুষ খেয়ে জনগনের জান নিয়ে খেলে। ব্যাপক মজার দেশ। শামচু ভাবলো একঢিলে দুই পাখি মারবে, পেত্নিও খুজবে আর খুনও করবে। শামচু নতুন একটা প্লান করলো, সে মানুষের বেশে যেয়ে খুন করবে। সুতরাং যেই কথা সেই কাজ। তল্পিতল্পা সহ রওনা দিলো বাংলাদেশের রাজধানীর উদ্দেশ্যে।

প্রথম বিপত্তি ঘটলো বর্ডার পেরিয়ে আসার সময়। বি এস এফ নামের কি এক বাহিনী শুরু করে গুলি বর্ষণ। কোনমতে হাফ ছেরে একটা ট্রাকের ভেতরে ঢুকে পরে। মানুষের বেশে আসায় বড্ড তেষ্টা পেয়েছে ততক্ষনে। ট্রাকের ভেতরে বোতল দেখে ঢক ঢক করে গিলে ফেলে কয়েক বোতল। কিন্তু বেচারা শামচু কি জানতো সেই ট্রাকে ছিল পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আসা ফেনসিডিল! লাইফে ফার্স্ট ইঞ্চি খেয়ে শামচু পুরা পিনিকে দিলো ঘুম। ভোরের দিকে ঘুম ভেঙ্গে ট্রাক থেকে বেরিয়ে এসে দেখে সে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে। খুশিতে ডগমগ হয়ে সে যখন রাস্তা পার হতে গেলো দেখে পুরা শরীরে গিটে গিটে, জোড়ায় জোড়ায় ব্যাথা। হতভাগা শামচু কি জানতো যে বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থ্যা এতখানি পঙ্গু!

পুরাই শকিং মুডে মাজারের পাশেই কোন এক হোটেলে যেয়ে কলিজাভুনা আর গরম পরোটার অর্ডার দিয়ে আয়েশ করে বসে সে। মাছির ভনভন শব্দে কিছুটা বিরক্ত শামচু। কিছুক্ষন পরে একটা ছেলে কলিজাভুনা আর পরোটা দিয়ে যায়। সাথে দুইগ্লাস ফিল্টার পানি, যারমধ্যে দুই আঙ্গুল ডুবিয়ে রেখেছে ছেলেটা। কি আর করার সব কিছু মানিয়ে নিতে হবে ভেবে শুরু করলো খাওয়া। কিন্তু এইদেশের কলিজাভুনার সাথে তেলাপোকা ভুনা ফ্রি মিক্স করে সেইটা শামচু ভাবতেই পারেনি। খাওয়া শেষে বিল দিতে যেয়ে বিপত্তি। কোন ব্যাটা পকেটমার যেন শামচুের এক্সচেঞ্জ করা সব টাকা ওয়ালেট সহ মেরে দিয়েছে। কি আর করার, এই অচেনা অজানা দেশে কি আর নিজের পরিচয় দেবে? চুপচাপ ছোটখাট একটা গনধোলাই হজম করে নিলো। শেষে তুলে দেয়া হলো দারোগার হাতে। দারোগা অফার করলো ২০০ টাকা দিলে ছেরে দেবে, কিন্তু টাকা নাই বিধায় দুই দিনের জন্যে লকাপে খুনি গালকাটা মজিদের সাথে রাখা হলো তাকে। ভূত শামচুর থেকে এই মজিদের রেকর্ড ভালো, নয়টা খুন করেছে অলরেডি। থানা হাজতের টয়লেটের গন্ধে পারলে পেটের নাড়ি ভুড়ি বেরিয়ে আসে। ঠিক দুইদিন পরে হাল্কা উত্তম মধ্যম দিয়ে তাকে ছেরে দেয়া হলো।

ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যামে অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হয় শামচুর। যোগাযোগ মন্ত্রিকে অভিসম্পাত করে বেরিয়ে পরে মিশনে। শামচু শুনেছে যুদ্ধাপরাধ নিয়ে এই দেশে একটা তুরকুলাম কান্ড চলতেছে। তাই সিদ্ধান্ত নিলো একটা যুদ্ধাপরাধীকে হত্যা করে হাতেখড়ি দেবে সে, এতে এই দেশের কিছুটা উপকার হবে তারও কাজ হয়ে যাবে। একজন যুদ্ধাপরাধীকে টার্গেট করে ফেললো সে, নাম দেলোয়ার হোসেন চাকডি। যেই ভাবা সেই কাজ, গভীর রাতে পৌঁছে গেলো চাকডি সাহেবের বাসায়। বেডরুমে ঢুকে শামচুের চোখ কপালে! চাকডি সাহেব তার বিবি সাহেবানের সাথে সাম্বা ড্যান্সে মশগুল। সম্মোহনী শক্তি দিয়ে ভূত তাকে সেখান থেকে বের করে আনলো। তারপরে নিজের সেই রক্তমাখা ভয়ংকর রূপে ফিরলো। গা ছমছম অবস্থা। নিকষ কালো অন্ধকার। একটি আলপিন পরার শব্দও চমকে দেবে। ভয়ানক গলায় শামচু সুধাইলো, “ চাকডি! আমি তোর জম হয়ে এসেছি, এই আমাবস্যায় তোকে খুন করে আমি আমার দুর্নাম ঘুচাব, মু হা হা”; শামচুর এই হুমকিতে চাকডি সাহেবের কোন ভাবান্তর হলো না। বরং উনি তিনবার মাওলানা মিজামির নাম নিয়ে ওয়াজ শুরু করে দিলেন। ওয়াজের আলোচ্য বিষয় দুনিয়াতে মানুষ আর জ্বীন ব্যাতিত অন্যকোন জাতি নাই। ওয়াজ করতে করতে ফজরের ওয়াক্ত হয়ে গেলো। শামচুের যাওয়ার সময় হয়ে গেছে, কারন ফজরের ওয়াক্তের পরে তার মানুষ রূপে আসতে হবে। সুতরাং সেদিনের মিশন ফেইল।

পরদিন ভেবেচিন্তে শামচু ঠিক করলো রাষ্ট্রপতি হিল্লুর রহমানকে হত্যা করবে, বেচারা উইদাউট ওয়াইফ কষ্টে আছে। তাছারা ওনার বয়স হয়েছে, তাকে হত্যা করলে এই দেশে ইয়ং কোন নেতৃত্ব আসবে। সুতরাং রাতে শামচু চলে গেলো রাষ্ট্রপতি ভবনে হিল্লুর রহমানকে খুন করতে। কিন্তু সেখানে যেয়ে ভূতবাবাজী পুরাই বেকুব হয়ে গেলো। ভেবেছিল রাষ্ট্রপতিকে সামান্য ভয় দেখালে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যাবে কিন্তু রাষ্ট্রপতি ১০০০ মিলিগ্রামের ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে অস্থির এক ঘুম দিয়েছে। বুঝতে বাকি রইলো না এদেশের রাষ্ট্রপতিরা নাক ডেকে ঘুমায় আর প্রধানমন্ত্রী তার চ্যালাপেলা মন্ত্রী মহোদয়দের নিয়ে দেশ চালায়। কি আর করার ঘুমন্ত মানুষকে হত্যা করা কাপুরুষের কাজ যা শামচুের দ্বারা সম্ভব না, সুতরাং মিশন ফেইল এগেইন।

তৃতীয়দিন শামচু ঠিক করলো বিরোধী দলের প্রধান মাজেদা মিয়ার বড় ছেলে বারেক মিয়াকে খুন করবে, পরে খোঁজ খবর নিয়ে দেখলো মেরুদন্ডহীন বারেক মিয়া উচ্চতর চিকিৎসা নেয়ার জন্য বাইরে ডিগ্রি নিতে গেছে। কি আর করা, ছোট ছেলে গোঁগোঁর দিকে নজর দিলো শামচু। এই রাতই হবে শেষ রাত গোঁগোঁর জীবনে। নিজের ভয়ানক রূপে গোঁগোঁর ঘরে ঢুকতেই হুইস্কির গন্ধ আর নিজের চেয়েও ভয়ানক গোঁগোঁর চেহারা দেখে পারলে ভীমরি খায় শামচু। বেচারা ভূত এতটাই ভরকে গেছে যে নিজের অস্তিত্ব ভুলে গোঁগোঁর সামনে যেয়ে বলে ফেললো, “ অভয় দিলে একটা কথা বলি বস, আমি আপনাকে খুন করতে এসেছে, অনুমতি দিলে...... তাছারা শুভ কাজে দেরী করতে নেই।“ গোঁগোঁ হুমায়ুন ফরিদী হাসি দিয়ে বললো,” সে পরে হবে, আগে দুই পেগ খেয়ে নাও।“ যাইহোক, হুইস্কির নেশায় পরে সেদিনের মিশনে ক্ষ্যান্ত দিলো শামচু।

শামচু দেখতে পেলো পত্রিকায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাকি সাকিব আল হাসান আর তামিম ইকবাল নামের দুইজন দেশবরেণ্য ক্রিকেটারকে পদচ্যুত করেছে। সোজা চলে গেলো সভাপতির অফিসে। সভাপতি সাহেব তখন ঘুষের টাকা গুনায় ব্যাস্ত। শামচু যতই বলে যে সে জান নিতে এসেছে সভাপতি যেন কানেই তুলে না কথা। শেষে সভাপতি বিরক্ত হয়ে একটা জার্সি ধরিয়ে দিয়ে বললো , “সবই আমার কথা মত হবে, আগামিকালের ম্যাচে তুমি মাঠে নামবা, যাও অনুশীলন করো।“

শামচু বুঝতে পারলো এই দেশের রাজনীতিবিদেরা এককাঠি সরেস। সুতরাং এবার তার চোখ পরলো মিডিয়া আর সংস্কৃতিক অঙ্গনের দিকে, প্রথমে প্রথমকালোর বরুন চৌধুরীর সামনে যেয়ে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলো। বেচারা এই বয়সে ফিটার খায়! কি অবস্থা! হতাশ না হয়ে সেদিনই চলে গেলো নায়িকা মুনসুনের বাড়িতে। বাড়িতে একাই ছিলো মুনসুন। এটাই মোক্ষম সুযোগ। বাথরুমের বাথটাবে পানিতে চুবিয়ে মারা হবে তাকে। নিজের গায়ে কারওয়ান বাজার থেকে গরুর রক্ত মেখে হাজির হলো মুনসুনের বেডরুমে। কারওয়ান রাজার থেকে রক্ত মাখতে যেয়ে কুত্তাদের সাথে যে যুদ্ধ করতে হয়েছে সেই কথা নাইবা বললাম। যাইহোক, বীভৎসত চেহারা নিয়ে মুনসুনের সামনে দাড়াতেই মুনসুন ফিট হয়ে বিছানায় পরে গেলো। শামচু ভাবলো এটাই সুযোগ, এবার ওকে বাথটাবে নিয়ে চুবিয়ে মারতে পারলেই কেল্লা ফতে। কিন্তু শামচুের কপাল বরাবরের মত তার বিরুদ্ধে। সারারাত চেষ্টা করেও বেচারা ভূত নায়িকা মুনসুনের ৩০০ টনের ভারী দেহ বাথটাব পর্যন্ত নিতে পারেনি।

এবার সে ঠিক করলো হিজড়া খ্যাত নায়ক ফাকিব খানের জান নিবে। রাতের বেলায় সকলের চোখে ফাঁকি দিয়ে ঢুকে পরলো হার্টথ্রব ফাকিব খানের বাংলোতে। বেডরুমে ঢুকেই দুই হাতে নিজের চোখ ঢেকে ফেললো শামচু। ফাকিব খান মেয়েদের গাউন পড়ে শুয়ে আছে। ঠোঁটের লিপস্টিক মুছতেও ভুলে গেছে। ভূত যখন পায়ে সুরসুরি দিয়ে ফাকিব খানকে জাগাতে চেষ্টা করলো তখন তিনি ঘুমের চোখে বলে উঠলেন সেই বিখ্যাত শব্দ, “আরাআআআমমম” ; যাইহোক অনেক কষ্টে জাগানো হলো তাকে। তারপরে কি হলো সেটাও কি আমাকে বলতে হবে? শুধু এতটুকই বলি, ফাকিব খান ভূত শামচুকে নিয়ে সাড়ে চার মিনিটের একটা ডুয়েট গান গেয়েছিল। সেখানে নায়িকা পুপু বিশ্বাসের সাথে যেসব অবিশ্বাসের দৃশ্য থাকে সেসব ছিল। ভূত কোনমতে নিজের জান নিয়ে বেঁচেছে সে যাত্রায়।

এরই মধ্যে শামচু জানতে পারে যে দেশে লাফালাফি করে রক গান গায় এক গায়িকা যার নাম মিলা, পুরা জাতি তার উপরে বিলা। শামচু রাতে চুপিচুপি যুয়াদ এর মিউজিক ল্যাবে যেয়ে হাজির। সেখানে যুয়াদ ফিট মিলার নতুন এ্যালবামের কাজ চলছিল। ঢোকার আগে বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দিলো শামচু। ভেতর থেকে মিলার চিল্লাচিল্লি শোনা যাচ্ছিল। সুযোগ বুঝে মিলার পাশে যেয়ে দাঁড়ায় ভূত। তারপরে............ মিলা ভুতকে এমন টিজ করছে যে এঞ্জেলিনা জোলিও হার মানতে বাধ্য, এতখানি ডোজ এঞ্জেলিনাও দিবার পারে নাইক্কা।

পুরানা পল্টনের কোন এক ক্যাসেটের দোকানে ন্যাকা নির্দয় খান নামের এক গায়কের গান বাজতেছিল আর আশেপাশের পাবলিক ও মাছিরা তাকে অভিসম্পাত করছিল। মাছিদের অভিযোগ নির্দয় খান কপিরাইট আঈন ভেঙ্গে তাদের ভনভন গান নকল করেছে। শামচু এবার হাজির নির্দয় খানের বাসায়। কিন্তু সেখানে যেয়ে পুরাই টাশকিত শামচু। কোথায় নির্দয় খান? এখানে তো শুধু একটা বানর দেখা যাচ্ছে। বানর হত্যা করে লাভ নেই, তাই সেদিনও ফিরে গেলো শামচু।

এবার লাস্ট ট্রাই। এইবার কিছু একটা করবেই শামচু। এবারের টার্গেট দেশের সবথেকে বোরিং সিঙ্গার রিপা রহমান। বেডরুমে ঢুকে শামচু দেখলো রিপা ভাবি তার শাড়ি একটার পর একটা চেঞ্জ করতেছে আর আহফুজ আঙ্কেল নাক ডেকে ঘুমাইতেছে। এবার সব থেকে ভয়ানক বেশ ধারন করলো শামচু। শিশুপার্কের সামনে থেকে একটা ছুরি কিনেছে সে। সোজা যেয়ে ছুরি মারলো আহফুজ আঙ্কেলের ভুড়িতে। ভাগ্যের বিরম্বনা ছুরি গেলো ভেঙ্গে। হাতল উল্টিয়ে দেখে সেখানে লেখা মেড ইন চায়না। এবার ভাবলো রিপা রহমানকে সিলিং ফ্যানের সাথে শাড়িতে ঝুলিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে মারবে। কিন্তু শামচুর কপালে কি সেই সুখ আছে? রিপা ভাবি শামচুকে পেয়ে বলল, “আহফুজ আমার গান শুনেনা, খালি নাক ডেকে ঘুমায়, আজকে তোমাকে পেয়েছি চান্দু।“ আর পালায় কোথায়? রিপা ভাবির সবগুলা এ্যালবামের গান রিপিড শুনতে শুনতে আর শাড়ির বাহার দেখতে দেখতে এবার শামচু অজ্ঞান হয়ে পরে গেলো।

জ্ঞান ফিরতেই দেখলো তাকে জেল হাজতে এনে রাখা হয়েছে। সবথেকে ভয়ানক ব্যাপার হলো তাকে যে কয়েদীর সাথে রাখা হয়েছে তার নাম পরিমল!!! পরিমল সম্পর্কে ইতিমধ্যে জেনেছে ভয়ঙ্কর সব তথ্য। আজকাল পরিমলের নজর নাকি কয়েদীদের দিকে পরেছে! এর আগে যে কয়েদীকে পরিমলের সাথে রাখা হয়েছিল দুইদিন আগে আহত এবং আশঙ্খাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। যাইহোক পুনরায় দুইদিন পরিমল আর হাবিলদারদের অত্যাচার ভোগ করে বাংলাদেশ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলো ভূত শামচু।

আসার সময়ের বর্ডারের বিরম্বনার কথা চিন্তা করে এমিরেটস এয়ারের টিকিট বুক করলো সে। বিমানবন্দর থেকে ইমিগ্রেশনে যখন ঘুষ দাবী করা হলো তখন শামচুের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এই দেশ গোঁড়া থেকে আগা পর্যন্ত এক অদ্ভুত সিস্টেমে চলে যা ভূতের জ্ঞানের বাইরে আর এই দেশের প্রতিটি মানুষ ভূত থেকেও বেশী অদ্ভুত। ভরাক্রান্ত মন নিয়ে সে ত্যাগ করলো তার সকল আশাভরসা আর বাংলাদেশ।

রহমত মিয়া !

রহমত মিয়া অনেক দিন হলো মাছ ধরে নদীতে খালে-বিলেমাছ যারা ধরে তাদের সবার-ই কোন না কোন ভৌতিক ঘটনা আছেরহমত মিয়ারও আছে কিন্তু এগুলো শুধু অন্যের কাছে বলার জন্য গল্প

রহমত মিয়া জীবনে কোনদিন ভয় পায় নাই এবং পাওয়ার সম্ভাবনাও কম


এইতো সেবার হিন্দুপাড়ার শ্বশানের পাশের নদীতে মাছ ধরতে যেয়ে লক্ষিন্দর এতবার ডাকার পরও তার দিকে ফিরে না তাকিয়ে দিব্যি মাছ ধরে বাড়ি ফিরেছে লক্ষিন্দর রহমত মিয়ার বন্ধুলোক ছিলো যাকে গত বছর ঐ শ্বশানে পোড়ানো হয়েছিলো।।

এমন ছিটেফোটা অনেক ঘটনাই রহমত মিয়ার জীবনে ঘটেছে, কিন্তু কোনদিন ভয় তো দূরে থাক তার বুক কাপেনি পর্যন্ত কটকার খালের কথা অনেক শুনেছে রহমত মিয়া, সেখানে নাকি বড় বড় মাছ পাওয়া যায়তবে দিনের বেলার চেয়ে নাকি রাতে গেলে নিরিবিলি পরিবেশে ভালো মাছ পাওয়া যায়কিন্তু ওই খালের বেশ দূর্নামও আছে আজ পর্যন্ত নাকি ঐ খালে কেউ রাতে মাঝ ধরতে যেয়ে ফিরে আসেনি

কিন্তু রহমত মিয়ার এতে কিছুই যায় আসে না, এসব তার কাছে শুধুই গল্পতবুও তার বউ যখন শুনলো রহমত মিয়া ঐ খালে মাছ ধরতে যাবে বলে ঠিক করেছে সে বাধ সাধলোতাকে যখন কিছুতেই বোঝাতে পারলো না রহমত মিয়া তখন সে বলল ঠিক আছে আমি সাথে কাউকে নিয়ে যাবো, একা যাবো না

কিন্তু এই তল্লাটে এমন কেউ যে নাই কটকার খালে তার সাথে যাওয়ার মত, তা রহমত মিয়া একটু পরেই টের পেলোযাকেই বলে সে-ই দৌড়ে পালায় জিদ চেপে যায় রহমত মিয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সে একাই যাবে আজ রাতে

বউকে কিছু না জানিয়ে জাল আর বইঠা নিয়ে রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে বের হয় ঘর থেকে সেততক্ষণে সারা গ্রাম ঘুমে বিভোরচারিদিকে কি নিদারুণ নিস্তব্ধতাতার মাঝে একা একা রহমত মিয়া হেটে চলে নদীর দিকেএকটুও বুক কাপে না তার 

নদীর পাড়ে পৌছে নিঃশব্দে নৌকায় উঠে বইঠা বাওয়া শুরু করে সে গন্তব্য কটকার খাল সামনে দিয়ে কিছুক্ষণ বেয়ে যাওয়ার পর নদী ডানে ও বামে দুদিকে বাক নিয়েছেবামে গেলে কটকার খাল আর ডানে বউবাজার বামে এক কটকার খাল ছাড়া আর কিছু না থাকায় ঐদিকে লোকজনের যাতায়াত কম

বাকেঁর প্রায় কাছে চলে এসেছে রহমত মিয়া, এমন সময় দেখল হঠাৎ আতশবাজির মত বউবাজার থেকে একটা নৌকা সোজা কটকার খালের দিকে যাচ্ছেসে একটু অবাক হলো এতরাতে আবার কে নৌকায় করে কোথায় যায়জোরে হাক ছাড়ে রহমত মিয়া "ঐ মাঝি কই যাও??"

অপাশ থেকে ভাঙ্গা গলায় মাঝির নির্লিপ্ত উত্তর কানে যায় রহমত মিয়ার "মাছ ধরইতে কটকার খালে"উত্তর শুনে মনে মনে খুশি হয় রহমত মিয়া, যাক একজন সঙ্গী তবু পাওয়া গেলোআবারো হাক ছাড়ে রহমত মিয়া "চল এক লগে যাই"কিন্তু রহমত মিয়ার ডাকে থামে না মাঝি, নিঃশব্দে বইঠা বেয়ে যায়বোকা রহমত মিয়া একবারও ভাবে না, পানির শব্দ ছাড়া নিঃশব্দে বইঠা বাওয়া কি সম্ভব বাক ঘুরে কটকার খালে পৌছায় রহমত মিয়াঅন্ধকারে মাঝির নৌকা খুজতেই চোখে পড়ে নৌকামাঝির দিকে তাকতে দেখতে পায় শুধু সাদা চাদর, যা দিয়ে এই গরমের মধ্যেও কেন মাঝি মাথা জড়ায় রেখেছে বোধগম হয় না রহমত মিয়ার

আর কোন কথা না বলে জাল বের করে খালের মধ্যে ফেলে সেখালের নিস্তব্ধতার মাঝে শুধু রহমত মিয়ার জাল টানার শব্দ শোনা যায়,ওদিকে মাঝি যে ঠায় বসে আছে রহমত মিয়ার দিকে কটকট চোখে তাকিয়ে তা খেয়াল করে না রহমত মিয়া

২বার জাল উঠানোর পরের বার জালে জোরে টান অনুভব করে রহমত মিয়া কোন বড় মাছ ধরা পড়ল ভেবে ব্যস্ত হয়ে পড়ে রহমত মিয়া কিন্তু এমন কি বড় মাছ যে টেনে যেন উঠাতেই পারছে না সে মাঝি কে ডাকার জন্য পিছনে তাকাতে গিয়ে দেখে মাঝি ঠিক তার পিছনেই দাড়িয়ে আছে

একটু খটকা লাগে রহমত মিয়ার সে তো মাঝি কে ডাকে নাই তাহলে মাঝি বুঝলো কিভাবে যে রহমত মিয়া তাকে ডাকবে এখনি???

অনেক প্রশ্ন মাথায় ঘুরলেও রহমত মিয়া মাঝি কে কিছুই জিগেস করে না,শুধু তাকিয়ে ভালোভাবে দেখার চেষ্টা করে লোকটা পাগল নাকি, মাথাও চাদরে ঢেকে রেখেছে কেন? ব্যাপারটা অস্বাভাবিক মনে হয় না রহমত মিয়ার কাছে

মাঝিকে বলে "হাত লাগাও মাঝি মনে হয় বড় মাছ" মাঝি রহমত মিয়ার দিকে না তাকিয়েই একটানে জাল উঠায় নৌকায় রহমত মিয়ার চোখ বড় বড় হয়ে যায় ,সে পারল না আর এত ভারি জিনিস মাঝি একা কিভাবে তুলল?

জাল তুলে দিয়ে মাঝি চুপচাপ বসে পড়ে পাটাতনের উপর রহমত মিয়া এতক্ষণ মাঝির দিকে তাকিয়ে ছিলো, এবার জালের দিকে তাকিয়ে আরেক দফা তার চোখ বড় বড় হয়ে যায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে জালে মাছের বদলে সাদা কাপড়ে আগা গোড়া মোড়া লাশের মত একটা বস্তু

এ কি ঝামেলা রহমত মিয়া ভাবতে থাকে কেন কেউ আসে না এখানে লাশটা খুলে দেখার ইচ্ছা হয় তার আর কিছু না ভেবেই লাশের মাথা আন্দাজ করে কাপড় খোলা শুরু করে রহমত মিয়া খুলেই আবছা আলোয় একটা মুখ দেখতে পায় সেপাশে কেউ এসে দাড়িয়েছে বুঝে সেদিকে তাকায় রহমত মিয়া

মাঝিকে দেখতে পায় মুখ থেকে চাদর সরিয়ে ফেলেছে মাঝি রহমত মিয়ার দিকে তাকিয়ে হাসছে মাঝি ভারি রাগ হয় রহমত মিয়ার মাঝির দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে লাশের দিকে তাকায় সে

কিন্তু একি!!! লাশ চোখ মেললো কিভাবে??

দুইটা হলুদ চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছে রহমত মিয়ার দিকে লাশটা ভারি রাগ হয় রহমত মিয়ার,সেই সাথে বুকটাও একটু জানি কেপে উঠে দুইটা হলুদ চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে থাকা লাশটার চেহারা হুবহু মাঝির মত জোরে শব্দ করে হাসতে থাকা দুইজন একই চেহারার মানুষের কাছ থেকে পালায় যেতে চায় সে কিন্তু কোন এক অদৃশ্য শক্তি তার শরীর বেধে রেখেছে যেন

জ্ঞান হারায় রহমত মিয়া গ্রামে তার আর ফেরা হয় না

ভয়ঙ্কর কবররে গল্প সমূহ !

গা শিউরানো জ্যান্ত কবর দেওয়ার ঘটনা অনেক ঘটেছে, জেনে হোক বা না জেনে। একটা সময় ছিল, যখন কাউকে শাস্তি হিসেবে কোনো কফিনে ভরে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হতো। তবে সব সময় যে শাস্তির জন্যই জ্যান্ত কবর দেওয়া হতো, তা নয়; কখনো কখনো ভুলে জ্যান্ত মানুষকে মৃত মনে করে কবর দিয়ে দেওয়া হতো। এভাবে কবর দেওয়ার ফলে বেশির ভাগ সময়ই জীবিত মানুষটা মাটির নিচেই দম বন্ধ হয়ে কিংবা খাবারের অভাবে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে মারা পড়ে। মৃত্যুর আগেই যদি ভুলে জ্যান্ত কবর দিয়ে দেওয়া হয়_এই ভয়ে জর্জ ওয়াশিংটন মৃত্যুশয্যায় ভৃত্যদের শপথ করান, তাঁর মৃত্যুর পর ১২ দিন পার না হলে যেন তাঁকে কবর না দেওয়া হয়। ১৮৯০ সালের দিকে অনেক রোগীকেই মৃত মনে করে মর্গে পাঠিয়ে দেওয়ার দৃষ্টান্তও রয়েছে।
 
 

দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ১৮৫১ সালে মারা যান ভার্জিনিয়া ম্যাকডোনাল্ড। কিন্তু তাঁকে কবর দিয়ে দেওয়ার পর মায়ের মনে হতে থাকে, তাঁর মেয়ে বুঝি এখনো বেঁচে আছে। ভার্জিনিয়ার কফিনটি তুলে আনার পর দেখা যায়, 'মৃত' ভার্জিনিয়ার হাত দুটি ক্ষতবিক্ষত। কফিনের গায়ে আঁচড়ের ধরন দেখেই অনুমান করা যায়, কতটা চেষ্টা করেছিল সে কফিন থেকে বেরিয়ে আসার।


১৮৯৬ সালে 'মৃত' ঘোষণার পর ম্যাডাম ব্লনডেনকে সমাহিত করা হয় একটি স্কুলের নিচে। কিন্তু স্কুলের বাচ্চারা যখন মাটির নিচ থেকে শব্দ শুনতে পাওয়ার অভিযোগ করে, তখন আবার কফিন ওপরে তুলে আনা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা যায়, সে সময় ব্লনডেন ছিলেন জীবনের অন্তিম মুহূর্তে, অল্প অল্প শ্বাস নিতে নিতেই ত্যাগ করেন শেষ নিশ্বাস।


১৮৮৬ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবর অনুসারে, কলিন্স নামের একটি ছোট্ট মেয়ে হঠাৎ মারা যাওয়ার পর তাকে সমাহিত করা হয়। কিন্তু পরে আবার তার কফিন খোলার পর দেখা যায়, তার হাত, পা আর মুখের অভিব্যক্তি ছিল ভীষণ অস্বাভাবিক, যা তাকে জীবন্ত কবর দেওয়ার ব্যাপারটি প্রমাণ করে।


১৮৮৯ সালে দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফের একটি খবরে গ্রেনোবলে সমাহিত করা একটি অজ্ঞাত লোকের কাহিনী ছিল। লোকটিকে মৃত ঘোষণা করার পর যখন তাঁর কফিনটি মাটিতে রাখা হচ্ছিল, তখন হঠাৎই ভেতর থেকে গোঙানি আর হাতড়ানোর শব্দ শোনা যায়। কিন্তু যতক্ষণে কফিনটি খুলে তাঁকে বের করে আনা হয়, ততক্ষণে তিনি দম বন্ধ হয়ে মারাই গেছেন। প্রায় একই ধরনের ঘটনার খবর প্রকাশিত হয় ১৮৩৮ সালে, দ্য সানডে টাইমসে।


১৮৭৭ সালে দ্য ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে এক মহিলার কথা বলা হয়, যাঁকে মৃত ঘোষণার পর সমাহিত করা হয়। কিছুদিন পর যখন আরেকটি মৃতদেহ দাফনের জন্য তাঁর কবর খোঁড়া হয়, তখন দেখা যায়, তাঁর শরীরটি ভীষণ বাঁকানো। এমন ঘটনা ঘটে ১৮৮৪ সালে মিস হকওয়াল্টের বেলায়ও।


১৮৭১ সালে ১৭ বছর বয়সী ম্যারি নোরাহ বেস্টকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তবে ধারণা করা হয়, তার মৃত্যুতে অনেকে উপকৃত হবে বলেই হয়তো তাকে তড়িঘড়ি সমাহিত করা হয়েছিল। ১৮৮১ সালে কফিন খুলে ম্যারির কঙ্কালটি পাওয়া যায় বসা অবস্থায়!


১৯০১ সালে মাদাম ববিন ইয়েলো ফিভারে আক্রান্ত হন। সে সময় তিনি ছিলেন গর্ভবতী। তাঁকে মৃত ঘোষণার পর যখন সমাহিত করা হচ্ছিল, তখন তাঁর নার্সের মনে হচ্ছিল, যেন তাঁর শরীরটা গরম আর পেশিগুলোও খুব একটা শক্ত নয়। পরে তার কফিন খুলে দেখা যায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। তিনি সেখানেই একটি বাচ্চা প্রসব করেছেন আর তারা দুজনই শ্বাস আটকে মারা যায়।